সুখে থাকতে ভুতে কিলায়ঃ বাংলাদেশে সরকার উৎখাতে চলমান অস্থিতিশীলতা কতটা যৌক্তিক-

সুখে থাকতে ভুতে কিলায়ঃ বাংলাদেশে সরকার উৎখাতে চলমান অস্থিতিশীলতা কতটা যৌক্তিক-

বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা চলছে তা কেন? কারণ যারা আন্দোলন করছেন তারা শুধু নিজেদেরকে ক্ষমতায় নিতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশের স্বার্থে নয়। কোনো দেশ যখন কোনো সরকার এগিয়ে নিয়ে যায় তখন ঐ সরকারকে উৎখাতের প্রয়োজন হয় না। তবুও নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান করতে চাচ্ছে বিএনপি, জামাত জোট।

বর্তমান সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যেসব কাজ করেছেন, স্বাধীন হওয়ার পর বিগত সরকারগুলো বিন্দু পরিমান কিছু করেছেন বলে আমার মনে হয় না। তাহলে কেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে?

বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা অবশ্যই বলাবাহুল্য। কারণ বিএনপি, জামাত সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থান করিয়ে মাত্র দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন রিজার্ভ রেখে গিয়েছিলেন। সে রিজার্ভ আট চল্লিশ বিলিয়নে রুপান্তর করে দেশের উন্নয়ন কাজে লাগাচ্ছেন বর্তমান সরকার প্রধান। এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। যেমন-

১. একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে আমার বাড়ি আমার খামার), আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম।

২. অর্থনৈতিক অগ্রগতি-

২.১- তৈরি পোশাক রপ্তানিঃ বর্তমানে বাংলাদেশ দ্বিতীয়, চীন প্রথম এবং ভিয়েতনাম তৃতীয় ।

২.২- খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনঃ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে । চাল ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় ও আলু উৎপাদনে সপ্তম। ২০০৬ সালে খাদ্যে ঘাটতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল।

২.৩- দারিদ্র্যের হারঃ করোনা কালের অব্যবহিত পূর্বে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ । ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ছিল ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।

২.৪- সমুদ্রসীমা জয়।

২.৫- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিঃ ১৪৩ টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ উপকারভোগী প্রায় সোয়া কোটি এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ কোটি ।

২.৬- ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে জমি-ঘর প্রদানঃ মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৬৯ হাজার ৯০৫টি পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান করা হয়েছে। এর আগে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

২.৭- মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রঃ জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ এর আগে কখনও নেয়া হয়নি ।

২.৮- কোভিভ-১৯ মহামারি অভিঘাত নিরসনে সরকারি প্রনোদনা ২৩টি প্যাকেজে মোট ১ লাখ ১২হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।

২.৯- কোভিভ- টিকাঃ ১ম ডোজ – ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭২ এবং ২য় ডোজ-৫ কোটি ২৮লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৫ (০২ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত )। ৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুদ আছে।

২.১০- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা।

৩. ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা
৪. পদ্মা বহুমুখী সেতু
৫. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
৬. এলএনজি টার্মিনাল
৭. রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র
৮. পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর
৯. ঢাকা মেট্রোরেল
১০. আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থার্ড টার্মিনাল।
১১. কক্সবাজার রেল লাইন ও স্টেশন।
১২. কর্নফুলী টানেল।
১৩. কক্সবাজার ভাসমান বিমান বন্দর
১৪. ১০০ সেতু উদ্বোধন
১৫. চীনের সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা বাধ প্রকল্প।
১৬. দক্ষিণ বঙ্গে রেল সংযোগ।
১৭. ই-পাসপোর্ট

এই ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় গ্রামের রাস্তা পাকা করন,কালভার্ট নির্মান, সেচ প্রকল্প প্রতিনিয়ত হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অন্যান্য দৃষ্টান্ত হচ্ছে-

ক. জাতীয় বাজেট: ২০২১ সালে ছিল বাংলাদেশের রেকর্ড সৃষ্টিকারী জাতীয় বাজেট যা অঙ্কে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। ২০০৬ সালে জাতীয় বাজেট ছিল ৬১ হাজার ৬ কোটি টাকা।

খ. জিডিপির হার: ২০২১ সালে বাংলাদেশের জিডিপির হার ছিল এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫.২ শতাংশ। করোনাকালে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল নিম্নমুখী।

গ. জিডিপির আকার: ২০২১ সালে জিডিপির আকার ৩৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা যা ২০০৬ সালে ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা।

ঘ. মাথাপিছু আয়: ২০২১ সালে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার যা ২০০৬ সালে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার।

ঙ. রেমিটেন্স আয়: ২০২১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০০৬ সালে ছিল ৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চ. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ: ২০২১ সালে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০০৬ সালে ছিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ছ. রপ্তানি আয়: ২০২১ সালে ৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর ২০০৬ সালে ছিল ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জ. আইসিটি খাতে রপ্তানি আয়: ২০২১ সালে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা এর আগে কখনও হয়নি।

দ্য ইকোনমিস্ট ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

তাহলে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে কেন তা বিএনপি জামাতের কাছে আমার প্রশ্ন। বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসলে কি দেশের মানুষদের সোনার আস্তরে মুড়িয়ে রাখবেন? যেসব নেতারা আজ মঞ্চে বড় বড় বুলি ছুঁড়ছেন তারা তো একসময়ে এমপি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, তখনকার সময়ে কোন কাজটা জনগনের স্বার্থে করেছিলেন?

আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিক, কাল পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মানুষদের মত না খেয়ে থাকতে হবে। দু্র্নীতিগ্রস্থ, জঙ্গী চাষীরা কখনই ভালো আবাদ করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

যাইহোক, কথায় আছে “সুখে থাকতে ভুতে কিলায়”। বাংলাদেশের মানুষ অন্যান্য সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের অধীনে সুখে আছেতো তাই সুখ সহ্য হচ্ছে না।

Share with:

  • IndianPad
  • del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Facebook
  • Mixx
  • Digg
  • Google Bookmarks
  • Live
  • MySpace
  • Yahoo! Bookmarks
  • LinkedIn
  • email
  • Print

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.